চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী, জনহিতকর ও স্বাস্থ্য সেবামূলক হাসপাতাল। জনসাধারণের অর্থানুকূল্যে এটি পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৭৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রামের কিছু মহৎ প্রাণ সমাজ হিতৈষী ব্যক্তি বর্গের উদ্যোগে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৪৩বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র শিশু স্বাস্থ্য বহির্বিভাগের মাধ্যমে এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এটি ৬৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। অত্র হাসপাতালে বর্তমানে বহির্বিভাগে শিশু স্বাস্থ্য , মেডিসিন, অবস এন্ড গাইনী, জেনারেল সার্জারী, অর্থোপেডিক সার্জারী, শিশু সার্জারী, নাক-কান-গলা, চক্ষু, দন্ত, চর্ম ও যৌন রোগ, ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, মানসিক রোগ, এজমা ক্লিনিক, ল্যাকটেশন ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, ইপিআই প্রোগ্রাম, ডট্স কর্নার, কনসালটেন্সি সার্ভিস, বিভিন্ন সাব-স্পেশালিটি ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক ইত্যাদি এবং আন্তঃ বিভাগে মেডিসিন, শিশু স্বাস্থ্য, নিওনেটলজি, শিশু নিউরোলজি, অবস এন্ড গাইনী, জেনারেল সার্জারী, শিশু সার্জারী, অর্থোপেডিক সার্জারী, নাক-কান-গলা ও চক্ষু বিভাগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা হিসেবে চালু রয়েছে এডাল্ট আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ, এনআইসিইউ, শিশু আইসিইউ, শিশু এইচডিইউ, শিশু সিসিইউ, থেলাসেমিয়া ইউনিট, কিডনী রোগীদের জন্য হেমোডায়ালাইসিস ইউনিট, ইউরোলজি, প্লাস্টিক সার্জারী, গ্যাষ্ট্রোএন্টারলজি বিভাগ, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধি শিশুদের জন্য, অত্যাধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা সহ বিশেষায়িত শিশু বিকাশ কেন্দ্র। ভবিষ্যতে এই হাসপাতালে আরো নতুন নতুন বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা চালু করা হবে। অসহায়, দুঃস্থ ও গরীব রোগীদের এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া অসহায় ও গরীব রোগীদের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যাকাত ফান্ড ও দরিদ্র কল্যাণ তহবিল থেকে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্র সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অন্যান্য রোগীদের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কম মূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে সকল চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ কোন রোগী অর্থাভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না –এটি এই প্রতিষ্ঠানের একটি অন্যতম লক্ষ্য। বর্তমানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অধীনে নিম্নেবর্ণিত প্রকল্প সমূহ অত্যন্ত সফল ও সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
১. চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ ইতিমধ্যে এটি দেশের অন্যতম সেরা একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে এই কলেজের ১৭ম ব্যাচের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে এব ১৩টি ব্যাচ এমবিবিএস কোর্স সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে।
২. চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল [৬৫০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে, যার কার্যক্রম উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। ]
৩. চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল নার্সিং ইনষ্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারী কোর্স বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অনুমোদিত ২০০৭ সাল থেকে চালু আছে।
৪. ২০১৭ইং থেকে শামসুন নাহার খান বিএসসি ইন নার্সিং কলেজ ৫০ জন ছাত্র/ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে চালু করা হয়েছে।
৫. চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ইনষ্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ। [পোষ্ট গ্রেজুয়েট ট্রেনিং সেন্টার। এর অধীনে বর্তমানে ডিসিএইচ কোর্স ও বিভিন্ন গবেষণা মূলক কার্যক্রম চালু আছে। এমডি ( পেডিয়েট্রিক্স) কোর্সের অনুমোদন পাওয়া গিয়াছে ]
৬. ক্যান্সার হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনষ্টিটিউট পুরোপুরি চালু আছে।
৭. অটিজম ও শিশু বিকাশ কেন্দ্রঃ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মেডিসিন, শিশু স্বাস্থ্য, জেনারেল সার্জারী, অর্থোপেডিক সার্জারী, শিশু সার্জারী, নিওনেটলজি, শিশু নিউরোলজি ও অবস এন্ড গাইনী বিভাগের প্রশিক্ষণ বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনস কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কর্মে এ প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃভবিষ্যতে এখানে একটি বেসরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, নতুন নতুন বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা চালু সহ একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ভিলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে হাসপাতালের একটি মাষ্টার প্ল্যান তৈরী করা হয়েছে। উক্ত মাষ্টার প্ল্যান অনুযায়ী ৮৫০ শয্যা বিশিষ্ট ( ১৩ তলা ) নতুন হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধকরণ সহ পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু করতে আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। গত ২৬/০১/২০১৩ ইং তারিখ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। নতুন এই হাসপাতাল ভবনে সকল বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা থাকবে। নতুন এই হাসপাতাল ভবন নির্মিত হলে তা এই অঞ্চলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে যুগান্তকারী অবদান রাখবে। নতুন এই হাসপাতাল ভবন নির্মাণে সহযোগিতার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, সমাজের দানশীল ব্যক্তিবর্গ, বেসরকারি বিভিন্ন দাতা সংস্থা, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অগ্রযাত্রয় সকল আজীবন সদস্য/সদস্যা, পৃষ্ঠপোষক, দাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
মোঃ রেজাউল করিম আজাদ
জেনারেল সেক্রেটারী, কার্যনির্বাহী কমিটি
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল
আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।